উন্নয়ন কলমে যাতনা জীবনে


হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আসছে। বাড়ছে উৎপাদন ক্ষমতাও। সরবরাহ লাইন বসছে। উপকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু ভোগান্তি আগেও যেমন ছিল এখনো রয়ে গেছে। একটু গরম বাড়লেই সেই চিরচেনা লোডশেডিং। এর সঙ্গে বোনাস হিসেবে রয়েছে ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়া, সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি। অর্থাৎ বিদ্যুতের যাওয়া আসা যেন এ জাতির ভাগ্যলিখন।
গত কয়েক বছরে ৬০ এর অধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। দু’দিন আগেও ৩১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। প্রতিবছর বিদ্যুৎ খাতে ৬ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার মতো ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। উন্নয়ন বাজেটে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও থাকছে এ খাতে। কিন্তু কোনোভাবেই কমছে না জনদুর্ভোগও।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) তাদের ওয়েবসাইটে লোডশেডিং শূন্য বলে উল্লেখ করছে। কিন্তু ঢাকাসহ দেশের জেলা শহর ও বেশকিছু উপজেলা শহরে আমাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সব জায়গায় বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে।
আজ মঙ্গলবারও রাজধানীর অনেক এলাকা জুড়ে প্রায় সারাদিনই ছিল না বিদ্যুৎ। ধানমণ্ডি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, রমনা ও পুরানা পল্টন এলাকা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবলে পড়ে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) আওতাধীন ধানমণ্ডি এলাকায় দু’টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে যাওয়া, রামপুরা থেকে ধানমণ্ডি পর্যন্ত ১৩৩ কেভির উলন গ্রিডের একটি সার্কিট নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়তে হয়। এতে ওইসব এলাকায় একটানা ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।
এ সঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারণে গত মাসেও দু’বার রাজধানীর অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটেছিল। এতো গেলো সঞ্চালন ত্রুটির ভোগান্তি। এছাড়া প্রতিদনিই রাজধানীসহ সারাদেশে দিনে চার থেকে ১০ বার পর্যন্ত  লোডশেডিংয়ের ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে পিডিবি বলছে, এখন চলছে বোরো মৌসুম। সেচ যন্ত্রের জন্য এসময় আড়াই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যায়। একই সঙ্গে গরমের কারণেও এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ লাগে। তাই গরমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও চাহিদা মেটাতে হিমশিম খায় কর্তৃপক্ষ। ফলশ্রুতিতে লোডশেডিং করেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয় তাদের।
তারা আরো বলছে, বিদ্যুতের উৎপাদন যেমন বেড়েছে চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে এক ব্যবধান থেকেই যাচ্ছে। একই সঙ্গে উৎপাদনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি। এ খাতের উন্নতি ঘটছে ধীরে। রয়েছে জ্বালানি ঘাটতিও। মেরামতের জন্যও অনেক কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তাই সক্ষমতা থাকলেও বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
তবে এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ও গবেষণা উইং পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বাংলামেইলকে বলেন, ‘লোডশেডিং আসলে নেই। আমরা চাহিদা অনুসারেই উৎপাদন করছি। বিদ্যুতের যেটুকু বিভ্রাট রয়েছে তা সঞ্চালনজনিত ত্রুটি।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অনেক এলাকায় বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ চলছে। উন্নয়ন কাজ চলাকালে সিংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। এছাড়া অনেক এলাকায় বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত নতুন সংযোগ দেয়ায় বেশি চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। ওভারলোডজনিত এ সমস্যার কারণেও অনেক সময় লাইনে ট্রিপ (সরবরাহ বন্ধ হওয়া) ঘটে। সাধারণ জনগণ এ সমস্যাগুলোকেই লোডশেডিং হিসেবে দেখছে।’
এদিকে জানা গেছে, গত ক’দিন ধরে সরকারি-বেসরাকারি খাত মিলিয়ে সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত  উৎপাদনের পরিমাণ ছিল সাত হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। একই সঙ্গে জ্বালানি স্বল্পতায় ৩০০ মেগাওয়াট ও মেরামতের জন্য কেন্দ্র বন্ধ থাকায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট