বাংলাদেশে আইনের শাসন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার চরম হুমকির মুখে


বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র চরম হুমকির মুখে। সাংবিধানিক প্রথা ও প্রতিষ্ঠান প্রায় অকার্যকর। ব্যক্তি কেন্দ্রিক ক্ষমতায়নে শাসন ব্যবস্থা পর্যুদস্থ। এ পরিস্থিতি উত্তরণে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যথাযথ ভূমিকা গ্রহণ জরুরি।
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড ইউনিভার্সিটির বেরন হলে অনুষ্ঠিত ওয়াচ ডেমোক্রেসি এন্ড ডেভলপমেন্ট আয়োজিত ‘অনস্লট অন হিউম্যান রাইটস, পলিটিক্যাল ফ্রিডম : ক্যান ডেমোক্রেসি সার্ভাইভ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ওয়াচ ডেমোক্রেসি এন্ড ডেভলপম্যান্ট এর আহবায়ক কাজী নুরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কানাডার ডালসন কলেজের ফ্যাকাল্টি অব হিউম্যানিটিজের অধ্যাপক ড. আবিদ এস বাহার ও সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার তানভীর নওয়াজ। এতে অতিথি আলোচক হিসেবে অংশ নেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্তন অর্থনীতিবিদ ড. এম ওসমান ফারুক, সাংবাদিক ও ইউএনসিএ সদস্য মুশফিকুল ফজল আনসারী, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব বেবী নাজনীন, ইইউএমএএসএস এর অধ্যাপক ড. খন্দকার ই করিম, সৈয়দ বদরে আলম ও সোহরাব খান। মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন আজাদ খান।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণের তথ্যভিত্তিক বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেন অধ্যপক ড. আবিদ এস বাহার ও সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার তানভীর নওয়াজ। পরিস্থিতি উত্তরণে ও পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা পেশ করেন। এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।
ড. এম ওসমান ফারুক বলেন, বাংলাদেশে নিপীড়ন ও নির্যাতনের সকল মাত্রা অতিক্রম করেছে। গত রোববার বাংলাদেশের একজন প্রাক্তন সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন পিন্টু কারা হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছেন। এরকম মৃত্যু, গুম ও খুনের ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে। একটি স্বাধীন দেশে এ অবস্থা মেনে নেয়া যায় না।
তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ ক্ষেত্রে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। যাদের দ্বারা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণ হচ্ছে তাদের নিকট তদন্ত চাওয়া বৃথা। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সকল অনিয়মের তদন্ত করতে হবে।
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকরা সরকারের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। যারা স্বাধীন মতপ্রকাশের চেষ্টা করছে সরকার তাদেরকেই শত্রু বিবেচনা করছে। একজন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, দুটি টিভি চ্যানেলের প্রধান নির্বাহীসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক সরকারের কারাগারে বন্দী। রিমান্ডের নামে তাদের উপর চালানো হয়েছে নির্যাতন।
তিনি বলেন, সদ্যসমাপ্ত জালিয়াতিপূর্ণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সংবাদ মাধ্যমকে প্রতিপক্ষের কাতারে দাঁড় করিয়ে সরকারি তরফে বেপরোয়া হামলা চালানো হয়। যা বাংলাদেশে আগে কখনো ঘটেনি। এ পরিস্থিতির অবসানে সকল বিবেকবান মানুষকে এগিয়ে আসা জরুরি বলে তিনি মত দেন।
বেবী নাজনীন বলেন, ক্ষত-বিক্ষত দেশ ও আক্রান্ত গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারে রাজনীতিবিদ ছাড়াও সংস্কৃতিকর্মীসহ পেশাজীবিদেরকেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের এই দুরাবস্থাকে আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। একটি রাষ্ট্রের এমন রূপ হতে পারে আমরা তা কখনো ভাবতে পারিনি। এ থেকে আশুমুক্তি প্রয়োজন।
সেমিনার শেষে বেবী নাজনীনের গাওয়া দেশাত্মবোধক গান উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করে।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট