মালেশিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবির ও কারাগারে মানবেতর দিন কাটছে ৪ হাজারের বেশি বাংলাদেশির।



 ওই দেশের ১২টি বন্দিশিবিরে ১,৭২৩ জন কারাবন্দি আছেন বলে হাই কমিশন সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন কারাগারে সাজা ভোগ করছেন ১,৯২৭ জন।

এটি সরকারি হিসাব। বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

এদের মধ্যে জেল জরিমানা শেষে নিজ খরচে দেশে ফিরছে। আর অনেকে টাকার অভাবে দেশে ফিরতে পারছেনা। সাজা শেষ হওয়ার পরেও জেল এবং ক্যাম্পে পড়ে রয়েছে।

এরই মধ্যে জহুর প্রদেশ বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ উদ্যোগ নিয়েছেন ৭০টি এয়ার টিকেট ফ্রি দেয়ার। এদের বেশির ভাগই অবৈধভাবে প্রবেশ ও অবৈধভাবে অবস্থানের কারণে গ্রেফতার হন।

সাম্প্রতিক সময়ে সাগরপথে মানব পাচার বেড়ে যাওয়ায় বন্দিশিবির ও কারাগারগুলোতে বাংলাদেশিদের সংখ্যাও বেড়েছে। মালয়েশিয়ায় গ্রেফতারের পর ও জেলে সাজার মেয়াদ শেষে বিদেশিদের বন্দিশিবিরে রাখা হয়। গত ছয় বছরে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশিকে সাজা খাটা শেষে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে অবৈধভাবে কাউকে মালয়েশিয়ায় না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রধান মো:শহিদুল ইসলাম।

বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র হতে জানা যায়, ১২টি বন্দিশিবিরে ১,৭২৩ জন বাংলাদেশি আটক আছেন। এর মধ্যে সিমুনিয়া ক্যাম্পে ১৩২ জন, লেঙ্গিং ক্যাম্পে ২৩৬, লাঙ্গকাপে ২৫০, জুরুতে ৫৬, তানাহ মেরায় ৪৮, মাচাপ উম্বুতে ১৭৯, পেকা নানাসে ১২০, আজিলে ১২৬, কেএলআইএ সেপাং ডিপোতে ৮১, বান্তিকে ১১৩, বুকিত জলিলে ২৩৪ ও পুত্রজায়ায় ১৮ জন সহ প্রায় ৪ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি আটক আছেন।

p-2এদের বেশির ভাগকেই অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের কারণে কিংবা ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে অবস্থানের কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন, ১৯৫৯-এর ধারা ৬(১) সি/১৫ (১) সি এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৬-এর ১২(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের উপ-সহকারি পরিচালক জোসামি মাস্তান বলেন, বিভিন্ন কারাগার ও ক্যাম্পে যাঁরা আটক আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ কিংবা অবৈধভাবে থাকার কারণে গ্রেফতার হয়েছেন।

এদিকে, বন্দিশিবির ও কারাগারে সাজা খেটে দেশে ফেরা বাংলাদেশিদের অনেকে অভিযোগ করেন, ক্যাম্পগুলোতে প্রায়ই বাংলাদেশিদের ওপর নির্যাতন করা হয়। এমনকি কেউ কেউ ক্যাম্পেও মারা যান। অনেক সময় ঠিকমতো খাবার দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন বন্দিশিবির ও কারাগারে সাজা খেটে দেশে ফেরা বাংলাদেশিদের অনেকেই। দীর্ঘদিন জেলে বা ক্যাম্পে থাকলেও হাইকমিশন তাঁদের দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নেয় না বলেও জানান তারা।

হাই কমিশনের কাউন্সিলার (শ্রম) সায়েদুল ইসলাম জানান, বন্দিশিবিরে যারা আটক রয়েছেন তাদেরকে দ্রুত দেশে পাঠানোর সবরকম ব্যবস্তা নিয়েছে। এর মধ্যে দূতাবাসের শ্রম শাখার সচিব বৃন্দ প্রত্যেকটি বন্দিশিবির পরিদর্শন করে বাংলাদেশীদের শনাক্তকরে পর্যায় ক্রমে তাদের দেশে পাঠানো হবে।

জহুর প্রদেশ বাংলাদেশী কমিউনিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম রবিন, সহ সভাপতি ফাহিম, সাধারন সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম আমিন সোমবার এ প্রতিবেদককে বলেন, জহুর কমিউনিটি প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। জহুর বারু পেকানানাস বন্দি শিবিরে বাংলাদেশী যারা বন্দি রয়েছেন তাদের মধ্যে যারা টাকার অভাবে টিকেট কেটে দেশে যেতে পারছেননা তাদের মধ্যে ৭০ জনকে হাই কমিশনের মাধ্যেমে দেশে পাঠানোর উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। কিছুদিনের মধ্যেই এদের দেশে পাঠানো হবে।
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া থেকে:

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট