বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ হ্যাক করে নিয়ে গেলো চায়না হ্যাকাররা



ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থই গত ৫ ফেব্রুয়ারি হ্যাক করেছে চীনভিত্তিক হ্যাকার গ্রুপ। চক্রটি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এ অর্থ সরিয়ে নিয়েছে শ্রীলংকা ও ফিলিপাইনে।
দৈনিক বণিক বার্তা এ খবর দিয়ে জানিয়েছে, শ্রীলংকায় সরিয়ে নেয়া অর্থ এরই মধ্যে উদ্ধার করা গেছে। আর ফিলিপাইন থেকে অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উপমহাব্যবস্থাপক ও একজন যুগ্ম পরিচালক দেশটি সফর করে এসেছেন।
ফিলিপাইনের অর্থ পাচার প্রতিরোধ কাউন্সিলও (এএমএলসি) বিষয়টি তদন্ত  করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে পাচারকৃত অর্থ জব্দের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ফিলিপাইনে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ৭৬ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫৯২ কোটি টাকা) বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের তিন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ হ্যাকড হয়ে পাচার হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করেছে। সেখান থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তাছাড়া দেশটির সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিও রয়েছে। ফলে দ্রুতই অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে বিষয়টি তদন্ত পর্যায়ে থাকায় এ নিয়ে মন্তব্য করা যাচ্ছে না।’
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ২০-২৫ শতাংশ নগদ আকারে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা হয়। বাকি অংশ বন্ড, স্বর্ণ ও অন্যান্য মুদ্রায় বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয়।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ হ্যাক করে চীনভিত্তিক একটি গ্রুপ। পরে তা শ্রীলংকা ও ফিলিপাইনে সরিয়ে নেয় তারা।
তবে এর কিছুদিনের মধ্যেই শ্রীলংকায় সরিয়ে নেয়া অর্থ ফেরত আনতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাকের হোসেন ও ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রবকে জরুরি ভিত্তিতে ফিলিপাইনে পাঠানো হয় বলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়।
তারা ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও এএমএলসিকে বিষয়টি অবহিত করলে এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। এর পরই বিষয়টি ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসে।
প্রবাসী ফিলিপিনোদের রেমিট্যান্স স্থানান্তরকারী সংস্থা ফিলরেমের মাধ্যমে এ অর্থ ব্যাংকের মাকাতি সিটি শাখায় জমা হয়। পাঁচটি পৃথক হিসাবে মোট ১০ কোটি ডলারের (৭৮০ কোটি টাকা) সমপরিমাণ অর্থ সেখানে জমা করা হয়।
এর পর স্থানীয় মুদ্রা পেসোয় রূপান্তর করে পুরো অর্থ একটি করপোরেট হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। করপোরেট ব্যাংক হিসাবটি চীনা বংশোদ্ভূত একজন ফিলিপিনো ব্যবসায়ীর। ওই ব্যবসায়ীর হিসাব থেকে অর্থ স্থানান্তর হয় তিনটি স্থানীয় ক্যাসিনোয়।
পুরো ঘটনাটি ঘটে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে। ফিলিপাইনের আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি দেশটির অর্থ পাচার প্রতিরোধ কাউন্সিল বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
এদিকে আর্থিক খাতে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে আরো সুদৃঢ় প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা দেয়াল গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
রবিবার বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান মানি লন্ডারিং কর্মকর্তাদের সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সম্প্রতি সারা বিশ্বেই ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে। প্রযুক্তির ফাঁকফোকর দিয়েও সাইবার অপরাধী চক্র অর্থ পাচারে সক্রিয় রয়েছে।
বাংলাদেশও এ সাইবার আক্রমণের বাইরে নেই। তাই পুরো আর্থিক খাতকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় আরো সক্রিয় ও সক্ষম হতে হবে। আরো সুদৃঢ়  প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা দেয়াল গড়ে তুলতে  হবে।
ওই সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি যে গতিতে প্রসারিত হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি গতিতে বাড়ছে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের আর্থিক অপরাধ ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের মাত্রা।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কৌশলগত দুর্বলতা ও উদার অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে লন্ডারিংকৃত অর্থ সহজেই বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবে ঢুকে পড়ে। আবার খুব সহজেই ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যায়।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট