উত্তাল সিলেট পরীক্ষা স্থগিত ক্লাস বর্জনসহ ৩ দিনের কর্মসূচি


সিলেট ব্যুরো : গত শনিবার সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের শেরপুর নামক এলাকায় বাস চাপায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল উত্তাল ছিল সিলেট মহানগরী। খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারে সিকৃবির শিক্ষার্থীরা নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে মানববন্ধন করে। এরপর চালক ও হেলপারের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে বিশাল মানববন্ধন পালন করে। গোটা নগরীতে যানজট দেখা দেয়। এক সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের গাড়ীও আটকা পড়ে মানববন্ধের সামনে। এ সময় সাবেক মন্ত্রী সিকৃবির শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন। সিকৃবির শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা স্থগিত ও ক্লাস বর্জন সহ ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে ৫ দফা দাবী উপস্থাপন করে। 
জানা যায়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ঘোরি মো. ওয়াসিম আব্বাসকে বাসচাপা দিয়ে হত্যার প্রতিবাদে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চৌহাট্টায় সড়ক অবরোধ করেন। রবিবার সকাল ১১টার দিকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ওয়াসিমের সহপাঠীরা। দুপুর ১২টার দিকে তারা নগরীর চৌহাট্টায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। শিক্ষার্থীদের অবরোধে চৌহাট্টার চার দিকে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে। এ সময় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, দুর্ঘটনার মামলা নয়, দুর্ঘটনার মামলাকে হত্যা মামলায় নিতে হবে। তিনদিনের মধ্যে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এ তিনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীরা ওয়াসিমের হত্যার প্রতিবাদে বাসচালক ও হেল্পারকে আইনের আওতায় এনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর, ঘাতক ‘উদার পরিবহন’ বাসের রুট পারমিট ও লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানান। এছাড়া নিরাপদ সড়কের দাবিতে তারা কোন ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা একই সময় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে চালক ও হেলপারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের ও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের পাঁচদফা 
এদিকে সিকৃবি শিক্ষার্থী ঘোরি মো. ওয়াসিম আব্বাসকে বাসচাপা দিয়ে ‘হত্যার’ প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রোববার তারা সিলেট নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে পাঁচদফা দাবি জানিয়ে অবরোধ তুলে নেন তারা।
শিক্ষার্থীদের পাঁচদফা দাবির মধ্যে আছে- অভিযুক্ত চালক ও হেলপারের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করা, উদার পরিবহরেন রোড পারমিট ও লাইসেন্স বাতিল করা, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহাসড়কে চলতে না দেয়া, অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি না চালানো এবং সড়কে শিক্ষার্থীসহ সকল যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
উল্লেখ্য, গত শনিবার বিকালে সিকৃবির বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী ঘোরি মো. ওয়াসিম আব্বাসসহ ১১ শিক্ষার্থী ময়মনসিংহ থেকে সিলেটগামী উদার পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো-ভ-১৪-১২৮০) ওঠেছিলেন। তারা হবিগঞ্জের নবীনগরের দেবপাড়ায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। ওই বাসযোগে তারা শেরপুর আসেন। অভিযোগ ওঠেছে, ভাড়া নিয়ে বাগবিতন্ডার জেরে শেরপুরে ওয়াসিমকে হেলপার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরে চালক দ্রুত বাসটি চালিয়ে দেন ওয়াসিমের ওপর দিয়ে। এতে গুরুতর আহত তিনি। তাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট